ইতিহাস

আডিডাস ও পুমাঃ পারিবারিক দ্বন্দ থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানী

আডিডাস ও পুমা বিশ্ববিখ্যাত দুই খেলোয়াড় সামগ্রী তৈরির প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানদ্বয় তৈরি হত না যদি এক পারিবারিক দ্বন্দের স্বীকার না হতে হত।

ফিফা, অলিম্পিক ও বিশ্বমানের নানা প্রতিযোগিতায় খেলোয়াড় সামগ্রী হিসেবে যাদের দেখা পাবেন তাঁরা হচ্ছে এই দুই কোম্পানি। আজ খোজার চেষ্টা চালাবো এদের পিছনের গল্প কি ছিল?

আডিডাস ও পুমা প্রতিষ্ঠার শুরুর গল্প

আডিডাসের প্রতিষ্ঠাতা আডলফ ডাসলর ও পুমার প্রতিষ্ঠাতা রুডলফ ডাসলর, যারা ছিলেন আপন সহোদর দুই ভাই।

রুডলফ ছিলেন বড় আর আডলফ ছিলেন ছোট।

জার্মানির হরজোজেনাউয়াচ শহরে ১৯২৪ সালে দুই ভাই মিলে “ডাসলর সু ফ্যাক্টরি” নামে কোম্পানির যাত্রা শুরু করেন। প্রকৃতপক্ষে, আডলফ শুরু করেছিলেন,পরে তার বড় ভাই রুডলফ এতে যোগ দিয়েছিলেন।

প্রথম জুতাটি দুই ভাই তৈরি করেছিলেন ১৯২৭ সালে তাদের পিতামাতার বাসভবনের লন্ড্রি ঘরে। পরে কর্মচারীর সংখ্যা ১২ তে উন্নীত হয় এবং তাদের আলাদা স্থানের দরকার হয়ে পড়ে।

“ডাসলর সু ফ্যাক্টরি” কোম্পানি সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছিল ১৯৩৬ সালে বার্লিনে আয়োজিত অলিম্পিকে। এই কোম্পানি যেসব অ্যাথলেট কে জুতা সরবরাহ করেছিল তাদের ভিতর সাতটি স্বর্ণের এবং পাঁচটি রূপা ও ব্রোঞ্জের মেডেল জিতেছিলেন।

ফলে তখন এই কোম্পানিটি মানুষের নজরে আসে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে হিটলারের নাৎসি বাহিনীতে এই দুই সহোদর যোগদান করেন এবং নাৎসি সৈন্যদের জুতা সরবরাহ করেন।

এই দুইভাইয়ের মধ্যে বিভাজন টা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৪৮ সালে। কিন্তু ঠিক কি কারণে তাদের ভিতর এই দ্বন্দ শুরু হয়েছিল এটা কেউ জানে না। এমনকি তাদের নাতি-নাতনিরাও না।

কিন্তু তাদের ভিতর বিভিন্ন থিওরি আছে যার কারণে দ্বন্দের শুরু হতে পারে, কিন্তু কোনটা স্পষ্টত না।

তাদের ভিতর বিরোধটা এমন পর্যায়ে পৌছেছিল যে, এই বিরোধের কারণে তাদের কর্মচারিরা বটেই, শহরের লোকজনের ভিতর পর্যন্ত এই বিরোধের বিস্তার ঘটেছিল।

  • আপন দুই সহোদরের দ্বন্দ্বে এই দুই কোম্পানীর জন্ম
  • ১৯৯০র দশকে এই দুই কোম্পানীই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানী হয়ে যায়
  • বর্তমানে তাঁরা পরস্পর বানিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী

ইতিহাসবিদ ওয়েকারের মতে, ‘ঐ সময়ে প্রত্যেক পরিবারের কেউ না কেউ আডিডাস ও পুমা কোম্পানিতে কাজ করতেন’।

আডিডাস শহরের উত্তরে এবং পুমা দক্ষিণে অবস্থিত যেটা অরাক নামক নদী দ্বারা বিভক্ত।

এখন আডিডাস ও পুমা এই দুই কোম্পানী দুটি ফুটফল ক্লাবকে স্পন্সর করেন, এজন্য প্লেয়ারদের তাদের খেলোয়াড় সামগ্রীর জন্য চিন্তা করতে হয় না! পুমা 1. FC Herzogenaurach এবং আডিডাস ASV Herzogenaurach কে স্পন্সর করে।

’৯০র দশকে পুমা ও আডিডাস ডাসলার পরিবারের উত্তারাধিকার প্রত্যাহার করে, ফলে শহরে তাদের প্রভাব হ্রাস পায়।

এটা বলা হয় যে, দুই পরিবারের মধ্যে এতটাই বিরোধ ছিল যে, তাঁরা একই বেকারিতে যেতেন না এবং নিজস্ব কসাইখানা ও পাব(মদের দোকান) ছিল।

পুমার প্রতিষ্ঠাতা রুডলফ ডাসলার বিজনেস ইনসাইডারকে বলেছিলেন, ‘তাদের বাড়িতে কখনও আডিডাসের নাম বলা হত না’।

এখনও দুই পরিবার একই শহরে বাস করে, কিন্তু এখন পারিবারিক দ্বন্দটা কমে গেছে কিন্তু তাদের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে। কারণ এই দুই কোম্পানী এখন আন্তর্জাতিক কোম্পানী। অর্থাৎ, এই শহর একটা কর্মক্ষম জায়গাতে রূপান্তরিত হয়েছে।

আপনি যখন হরজোজেনাউয়াচ শহরে হাটবেন, তখন একটা বিষয় আপনার নজর কাড়বে। সেটি হলঃ শহরের বাসিন্দারা তাদের জামা কাপড় থেকে শুরু করে জুতা পর্যন্ত হয় আডিডাস না হয় পুমা যেকোন একটি ব্রান্ডের পরবে। দুই ব্র্যান্ডের এক সাথে এক জনের শরীরে পাওয়া যাবে না।

কিন্তু শহরের মেয়র কৌশলগত কারণেই দুটি ব্র্যান্ডের জিনিস ব্যাবহার করেন।

আডিডাস ও পুমা এর হেডকোয়ার্টার হরজোজেনাউয়াচ শহরেই অবস্থিত এবং পায়ে হেটে দশ মিনিটের পথ।

পাবলিক ট্রান্সপোর্ট গুলোতে এই দুই কোম্পানীই স্পন্সর করে, ফলে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট গুলো অধিক লাভবান হয়।

বহু দশকের দ্বন্দের পর ২০০৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি দিবসে দুই পরিবারের ভিতর একটা প্রীতি খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেই খেলায়ও কেউ ছাড় দেয়নি। খেলোয়াড় সামগ্রী, জার্সি সবকিছুতেই দুই কোম্পানীর লোগো ছিল।

আডিডাস ও পুমা তাদের পারিবারিক দ্বন্দটা নমনীয় হলেও বিশ্ববাজারে তাঁরা একে অপরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগী।

আডলফ ডাসলর ও রুডলফ ডাসলর দুই ভাই কি নিয়ে দ্বন্দে জড়িয়ে ছিল তা বিশ্লষণের প্রয়োজন নেই, কিন্তু তাদের এই দৈরত্বের ফলে যে এমন দুটি বিশ্ববিখ্যাত কোম্পানীর জন্ম হবে, কে জানতো!

বিজনেস ইনসাইডার অবলম্বনে লেখা।

আরও পড়তে পারেন

wzaman

Share
Published by
wzaman

Recent Posts

Safety measures for Heatwaves – Dr. Md. Abdur Rakib

Bangladesh is experiencing a heatwave and extreme weather. Today's highest temperature reached 42.6°C in Jashore…

1 week ago

Workaholism বা কর্মে আসক্তি  – আল শাহারিয়া

Workaholism হলো মানুষের এমন এক স্বভাব যার উপকারী এবং অপকারী উভয় দিকই বিদ্যমান। এর উপর…

3 weeks ago

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহারে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহার করলেই পাবেন ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। ফলে আপনার শেখার…

3 months ago

মেডুসা: গ্রিক মিথোলজির এক কালো অধ্যায় – আল শাহারিয়া

গ্রিক মিথোলজি অনুসারে, মেডুসা একসময় একজন অত্যন্ত সুন্দর নারী ছিলেন যিনি এমন এক সর্পকেশী দানবীতে…

1 year ago

রূপম ইসলামের জন্মদিনে লিখলেন আল শাহারিয়া

রূপম ইসলাম (Rupam Islam) নামটা শুনলেই রক্তের উথাল-পাথাল টের পাওয়া যায়। কথা‚ সুর আর গায়কীর…

1 year ago

সর্বকালের সেরা সুপারভিলেন: হিথ লেজার – আল শাহারিয়া

একজন সুপারভিলেন যিনি সুপারহিরোদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা,সম্মান পায় তিনিই হিথ লেজার।অনেকেই "The Dark Knight-2008" চলচিত্রটি…

1 year ago

This website uses cookies.