পাঁচমিশালি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা অবদান রেখে গেছেন এদেশের রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, অর্থনীতি সহ বাংলাদেশের অনেক উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডে। বাংলাদেশের স্বকীয়তা জানান দিয়েছে বিশ্বের দরবারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, যেটা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত। যদিও এই অক্সফোর্ড তার নাম বর্তমানে ধরে রেখেছে, সে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে।

গত ১লা জুলাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পা দিয়েছে ১০০ বছরে। এই পূর্ববঙ্গের মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো যথাযথ ভাবে ছড়াতে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। এই বঙ্গের উন্নতির জন্য বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল, কিন্তু তৎকালীন হিন্দুদের ব্যাপক বিরোধিতার কারণে ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ রদ করতে বাধ্য হয়। বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে, দাবি ওঠে এ অঞ্চলে একটা বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার। সেই দাবির ফল ই আজকের আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রস্তাবক ছিল নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী।  নবাব স্যার সলিমুল্লাহর ব্যাপক অবদান রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা

এ পর্যন্ত বহু কৃতি শিক্ষার্থী বের হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তাদের ভিতর উল্লেখযোগ্য কয়েকজনকে নিয়ে আজকের আয়োজন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ছবিঃ Getty Images

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির জন্য যে মানুষ টার সবচেয়ে বেশি অবদান, তিনি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঢাবির আইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। যদিও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারিদের আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে। ৬১ বছর পরে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই আগস্ট তার এই বহিষ্কারাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উঠিয়ে নেয়।

শেখ হাসিনা, ছবিঃ গেটি ইমেজেস

শেখ হাসিনা

বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কৃতি ছাত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। তিনি ঢাবির ছাত্র লীগের একজন সদস্য এবং বেগম রোকেয়া হলের সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক, ছবিঃ ইন্টারনেট

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক

অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরাদের মধ্যে অন্যতম একজন সেরা ছাত্র। তিনি বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা দার্শনিক, চিন্তক, গণবুদ্ধিজীবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩১ সালে “রাজনৈতিক অর্থনীতি” বিভাগে ভর্তি হন ও ১৯৩৬ সালে তিনি মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিভাগে যোগদান করেন।

তার জ্ঞানের প্রতিভা এতই বিকশিত ছিল যে, অনেকে তাঁকে ” শিক্ষকদের শিক্ষক” বলে অভিহিত করেছেন। বাংলাদেশের আরেক গণবুদ্ধিজীবী আহমদ ছফা তাঁকে নিয়ে বিখ্যাত বই ” যদ্যপি আমার গুরু” লিখেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক অবিবাহিত ছিলেন।

মুনীর চৌধুরী, ছবিঃ ইন্টারনেট

মুনীর চৌধুরী

মুনীর চৌধুরী বাংলাদেশের একজন প্রথিতজশা শিক্ষাবিদ, নাট্যকর ও সাহিত্য সমালোচক। বাংলা নাটকের তার অবদান অনেক। তার বিখ্যাত দুটি নাটক ‘কবর’ ও ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ বাংলাদেশের শিক্ষাকার্যক্রমে সহপাঠ হিসেবে পড়ানো হয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন এবং ১৯৪৭ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা দের অন্যতম এই ছাত্রকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার দিনে তাকে নির্মম হত্যা করা হয়।

জাহানারা ইমাম, ছবিঃ ইন্টারনেট

জাহানারা ইমাম

জাহানারা ইমাম, তিনি শহীদ জননী হিসেবেও পরিচিত। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর সন্তান শাফি ইমাম রুমি শহীদ হন। এই শহীদ জননী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ১৯৬৩ সালে এই বিভাগ থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির কারণে তাঁর নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখোগ্য। তিনি একজন সুলেখিকাও বটে। একাত্তরের দিনগুলি মুক্তিযুদ্ধের উপর তাঁর বিখ্যাত বই।

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, ছবিঃ উইকিপিডিয়া

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা যারা আছেন তাদের ভিতর অন্যতম মেধাবী ছাত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৭ সালে অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং এখান থেকে বি.এ ও এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। দারিদ্র বিমোচনে ব্যাপক ভূমিকা পালনের জন্য ২০০৬ সালে তিনি ও তাঁর প্রতিষ্ঠান “গ্রামীণ ব্যাংক” প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনিই একমাত্র বাংলাদেশী নোবেল বিজয়ী।

ফজলুর রহমান খান, ছবিঃ উইকিপিডিয়া

ফজলুর রহমান খান

ফজলুর রহমান খান কে বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলী বলা হয়। তিনি তৎকালীন আহসানউলাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বুয়েট) থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। তখন এই প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ ছিল। বিখ্যাত শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার (বর্তমানে এটার নাম উইলিস টাওয়ার) এর নকশা করেন তিনি।

আব্দুস সাত্তার খান,ছবিঃ উইকিপিডিয়া

আব্দুস সাত্তার খান

আব্দুস সাত্তার খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের কৃতি ছাত্র ছিলেন। তিনি ঢাবি থেকে ১৯৬৩ সালে রসায়নে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। প্রায় চার দশক তিনি নাসার সাথে যুক্ত ছিলেন এবং ৪০টির অধিক সংকর ধাতু তৈরি করেন। মহাকাশ গবেষণায় তাঁর ব্যাপক অবদান রয়েছে। তার ৩১টি প্যাটেন্ট রয়েছে।

এছাড়া হাজারও গুণী শিক্ষার্থী ও শিক্ষক রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। নাম জানা ও অজানা এইসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীরা দের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

wzaman

View Comments

  • অথচ এই প্রাচ্যের অক্সফোর্ডের অবস্থা আগের অনেক শোচনীয়। আবার আগের মত যৌবন ফিরে পাক শতবর্ষী এই বিদ্যাপীঠের।

Recent Posts

Safety measures for Heatwaves – Dr. Md. Abdur Rakib

Bangladesh is experiencing a heatwave and extreme weather. Today's highest temperature reached 42.6°C in Jashore…

6 days ago

Workaholism বা কর্মে আসক্তি  – আল শাহারিয়া

Workaholism হলো মানুষের এমন এক স্বভাব যার উপকারী এবং অপকারী উভয় দিকই বিদ্যমান। এর উপর…

3 weeks ago

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহারে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহার করলেই পাবেন ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। ফলে আপনার শেখার…

3 months ago

মেডুসা: গ্রিক মিথোলজির এক কালো অধ্যায় – আল শাহারিয়া

গ্রিক মিথোলজি অনুসারে, মেডুসা একসময় একজন অত্যন্ত সুন্দর নারী ছিলেন যিনি এমন এক সর্পকেশী দানবীতে…

1 year ago

রূপম ইসলামের জন্মদিনে লিখলেন আল শাহারিয়া

রূপম ইসলাম (Rupam Islam) নামটা শুনলেই রক্তের উথাল-পাথাল টের পাওয়া যায়। কথা‚ সুর আর গায়কীর…

1 year ago

সর্বকালের সেরা সুপারভিলেন: হিথ লেজার – আল শাহারিয়া

একজন সুপারভিলেন যিনি সুপারহিরোদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা,সম্মান পায় তিনিই হিথ লেজার।অনেকেই "The Dark Knight-2008" চলচিত্রটি…

1 year ago

This website uses cookies.