সর্বকালের সেরা সুপারভিলেন: হিথ লেজার – আল শাহারিয়া

একজন সুপারভিলেন যিনি সুপারহিরোদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা,সম্মান পায় তিনিই হিথ লেজার।অনেকেই “The Dark Knight-2008” চলচিত্রটি দেখেছেন। এই সিনেমায় বিভিন্ন উপায়ে হার্ভি ডেন্টকে হত্যার চেষ্টা করেন যিনি তিনিই হিথ লেজার। কোটি মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এক সুপারভিলেন। তিনি যে শুধুমাত্র স্ক্রিপ্ট দেখে অভিনয় করতেন এমনটা নয়। তিনি জোকার চরিত্রটিকে বাস্তবেই নিজের ভিতর ধারণ করিয়েছিলেন। স্ক্রিপ্টের বাইরেও তিনি সিনেমায় বিশেষ অংশে কাজ করে চরিত্রটা ফুটিয়ে তুলেছেন সুন্দরভাবে।

২০০০ সালের ভ্যানিটি ফেয়ারের এক সাক্ষাৎকারে কালজয়ী এই অভিনেতা বলেন,“আমার জীবনের নিয়ন্ত্রক আমি, হলিউডের কেউ নয়। মজা পাই বলেই আছি। যেদিন মজাটা আর থাকবে না, সেদিনই চলে যাবো।”

অস্কারজয়ী এই অভিনেতা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ, অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। তাঁর মা স্যালী লেজার বেল ছিলেন একজন শিক্ষিকা আর বাবা কিম লেজার একজন খনি প্রকৌশলী। হিথ ছিলেন বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান। তিনি ছিলেন একজন অস্ট্রেলীয় অভিনেতা ও পরিচালক। ১৯৯০-এর দশকে অস্ট্রেলীয় টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার অভিনয়ের অভিষেক হয়। তার স্ত্রী ছিলেন অভিনেত্রী মিশেল উইলিয়ামস। কম সময়ের মধ্যেই হলিউডের উদীয়মান তারকা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হিথ লেজারকে স্মরণ করা হয় তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রশংসিত অভিনেতা হিসেবে। শুরুর দিকে তাঁর অভিনয়শৈলীর গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, কিছু অসাধারণ কাজের মাধ্যমে অল্প সময়েই দর্শকদের মাঝে তাঁর প্রতিভার কথা প্রকাশ পায়।

তাঁর শৈশব কাটে পার্থের সাবিয়াকোতে। তিনি পড়াশুনা করতেন সেখানকার গিল্ডফোর্ড গ্রামার স্কুলে। দাবা খেলতে পছন্দ করতেন তিনি। মাত্র দশ বছর বয়সেই তাই জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমা অঞ্চলের জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ। যখন তাঁর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়, তখন তার বয়স মাত্র এগারো বছর।

২০০৩ সালে, ডার্ক নাইট ট্রিলজির প্রথম সিনেমা ‘ব্যাটম্যান বিগিনস্‌’ ব্রুস ওয়েইন চরিত্রের জন্যে কমবয়সী অভিনেতার খুঁজতে থাকা পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান গিয়েছিলেন লেজারের কাছে। সুপারহিরো সিনেমায় অভিনয় করতে অনুৎসাহী লেজার নোলানলে সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাটম্যান বিগিনস্‌ দেখে তিনি এতোটাই মুগ্ধ হন যে, নিজের মত পরিবর্তন করেন। পরের সিনেমাতে জোকারের আসার ইঙ্গিত দেখে তিনি নিজেই নোলানের কাছে অনুরোধ করেন ভিলেন জোকারের চরিত্রে তাঁকে নেয়ার জন্য। চরিত্রটি সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি অনেক পরিশ্রম করেন। তিনি এক মাসের জন্য একটি হোটেল রুম ভাড়া করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। যাতে তিনি চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য, অঙ্গবিন্যাস এবং কণ্ঠ ভিন্নভাবে পরিবেশন করতে পারেন, সেজন্যে দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করে যান। তাঁর সৃষ্ট ব্যতিক্রমী এই জোকারের চিন্তাধারা আর অনুভূতি তিনি একটি ডায়রিতে লিখে রাখতেন। এই জোকার চরিত্রটিকে সর্বকালের সেরা ভিলেন ক্যারেক্টর হিসাবে গণ্য করা হয়।

নব্বইয়ের দশকে সিনেমা এবং কমিকস দুই ক্ষেত্রেই দেখানো হয়েছিল জোকারে শারীরিক অবস্থার পেছনে দায়ী হচ্ছে রাসায়নিক দুর্ঘটনা। তাঁর অভিনীত এই জোকার চরিত্রটি ছিল অন্যান্য জোকার থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। সবুজ রঙ করা শুকনো চুল আর ক্লাউনের মেকআপ করা এই জোকারের মুখে খেলা করতো গ্লাসগো হাসি। ধারণা করা হয় ‘দ্য ক্রো’ সিনেমা থেকে মেকাপ অনুপ্রাণিত। চলচ্চিত্রে নিজের মুখের দাগ সম্পর্কে তাঁকে বিভিন্ন গল্প বলতে দেখা যায়। তাঁর মুখের দাগ সম্পর্কে তিনি বলেন শিশু নির্যাতনের কথা। আবার কাউকে বলেন তিনি নিজেই এটা করেছেন। নিজের অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে তিনি কমিকস বিশ্বের জোকারকে ভিন্নরূপে বাস্তবে রূপান্তর করেন। তিনি ছাপিয়ে গিয়েছেন নিজেকেই। তিনি জানান যে, চরিত্র বাস্তবসম্মত করার জন্যে তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রম করতেন। সারাক্ষণ সেই চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকতেন বলে দৈনিক মাত্র দুই ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেও পারতেন না। এমনকি ডাক্তারের দেয়া ঘুমের ওষুধও একসময় আর কাজে আসেনি।

“The Dark Knight ” চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই ২০০৮ সালের ২২শে জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ ৩:৩৬ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে পুলিশ জানায় ড্রাগ ওভারডোজের কারণে ২৯ বছর বয়সেই এই প্রতিভাবান অভিনেতা মারা গিয়েছেন।

সিনেমার কিছু সংলাপঃ “Why So Serious?”,”If You Are Good At Something,Never Do It For Free.”,”Let’s Put A Smile On That Face.”

আল শাহারিয়া
কবি, গীতিকার ও কন্টেন্ট রাইটার

Leave a Reply