পাঁচমিশালি

নাগরিক জার্নাল

নাগরিক জীবন হতে পারে শহুরে বা গ্রাম্য কিংবা বন্য। নানা সময়ে নানা কথা লেখা হয়ে থাকে আমাদের ডায়েরির পাতায়। সেসব থেকেই আমাদের তিন পর্বের নাগরিক জার্নাল। লিখেছেন আল শাহারিয়া।

নাগরিক জার্নালঃ পর্ব ০১

গ্রাফিতি হতে কিশোরীর ছুটে চলা মেঠোপথ আর মর্গ থেকে সোজাসুজি নরকের যাত্রাপথ যথাক্রমে মানুষ ও আত্মায় পরিপূর্ণ।

গ্রাফিতির শহরে প্রতিটি ধুলোজমা পায়ে মিশে আছে অবসাদ। ওদের হৃদয় খুঁজলে পাওয়া যাবে অবসন্নতা‚ অপ্রাপ্তির বিশাল রাজ্য।

তবু ওরা বেঁচে থাকে‚ বাঁচার চেষ্টা করে চলছে অনবরত। শহরের অন্যপ্রান্তে সুদর্শন যুবক লাল-নীল রঙে রাঙিন সহস্র স্বপ্ন প্রেমিকার হাতে গুঁজে মৃত্যুর অন্তহীন অপেক্ষা করছে।

কেউ আবার এই নির্বাসনে কলমের ডগায় প্রেমিকাকে বসিয়ে বানাচ্ছে নানান কিছু। লিখছে কতশত গান-গল্প-নাটক-কবিতা। কবিতার বয়স হয়ে এলে তাকে ভুলে যায়। নতুন কবিতা জন্মলাভ করে কবিতার খাতায়।

প্রেমিকার জন্য লেখা চিরকুট হারিয়ে ফেলে দ্রুত। আমি জানি পড়ার টেবিলের ফিজিক্স বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে আছে কিছু চিরকুট।

কিন্তু বইটা খোলা হয় না অনেকগুলো দিন। শোনো এই বিকেলের কথা। এই বৃষ্টি বিকেল। অনিন্দ্য সুন্দর বিষ্ময়ে ডুবে থাকা এই বিকেল।

বৃষ্টি শেষে ওই যে নীলাকাশ চকচক করে। সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়। শেষ বিকেলের শেষ রোদে শেষ রৌদ্রস্নান অনিন্দ্য সুন্দর। আবার কোনো বিকেল একাকী হয়।

আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটি এই সময় কল্পনায় প্রিয়তমার পাশে বসে থাকে। হঠাৎ অবাস্তব ওই অবয়ব অদৃশ্য হয়ে যায়। তখনি একটি তারা খসে যায়। স্বেচ্ছায় খসে পড়ে। ওই তারার খোঁজ আকাশ কভু রাখে না।

আকাশের লক্ষাধিক নক্ষত্রের মধ্যে একটি তারা খসে গেলে আকাশ কেনো কাঁদবে! স্পর্শ করবে কেনো তাকে! ওই বিত্তশালী আকাশ একদিন ঠিকই কাঁদবে। যেদিন একটি একটি করে সবগুলো তারা ঝরে যাবে গাছের পাতার মতো সেদিন আকাশ শূন্য হবে।

চাঁদ-সূর্যের সংসার খুব বেশি স্থায়ী হবে না। রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠগুলো সব প্রেমিক-প্রেমিকায় পূর্ণ থাকে। তাঁদের চুপিচুপি সতর্ক আলাপনে মাঝেমধ্যে জোনাকি আসে সঙ্গ দিতে। ওদের গল্প শোনে জোনাকি।

আবার অনেকেই এসময় হলরুমে বসে বসে বুকে আজন্ম আমাবস্যার সাথে সন্ধি করে। পূর্ণিমার আলো ঘরে আসার আগেই তাকে গ্রাস করে ফেলে অন্ধকার। কুচকুচে কালো অন্ধকার। এদেরও জীবনে প্রেম উঁকি দেয়।

ব্যক্তিগত অপ্রতুলতা আর পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে প্রেম প্রেমই থেকে যায়। ওই প্রেমে ভালোবাসা ঢুকতে পারে না। আনন্দধারা বয়ে যাক প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে।

নাগরিক জার্নাল
-৩১ জুলাই‚ ২০২০

নাগরিক জার্নালঃ পর্ব ০

শহরের কোণে শুভ্র কাশফুলেও ধুলো জমে। অলি-গলির বিলবোর্ড-ব্যানার ঢেকে যায় ধুলোর আস্তরণে। নাগরিক রূপকথায় ভরা সাইনবোর্ড দমবন্ধ হয়ে মৃতের মতো পড়ে থাকে। তারপর শহরে একদিন বৃষ্টি আসে।

সেই বৃষ্টিতে ভিজে যায় সব। কাশফুল থেকে সাইনবোর্ড। ধুয়ে যায় বিষাক্ত ধুলো-ময়লা। মেঘে ঢেকে যায় শহর। বিজলির ঝলকানিতে চকচকে চোখ বাঁচার নতুন স্বপ্ন দেখে। এই মানববিরূপ আবহাওয়াতেও একদল মানুষ একাকী অনন্ত পথঘাট পেরিয়ে যায়।

কেউ ছুটে বেড়ায় কর্মের সন্ধানে। বৃষ্টি শেষে নতুন সূর্য আসে। নতজানু কাশফুল নতুন সূর্যের আলোয় রৌদ্রস্নানে মাথা তুলে দাঁড়ায়।

আমাদের পায়ে মাড়িয়ে যাওয়া ঘাসগুলো পর্যন্ত জ্বলজ্বল করে ওঠে। যেন নতুন জীবন পাওয়া। নতুন করে বাঁচতে পারা। কিন্তু কিছুক্ষণ পর এই পার্কের ঘাসের উপর কাঁচি চালাবে মালি।

কত প্রেমিক-প্রেমিকা প্রেম বিনিময় করবে ঘাসের শরীরে দাঁড়িয়ে। দম্পতি অথবা দুই প্রজন্ম একসাথে ধুলোর জুতোয় আবার মাড়িয়ে যাবে তাকে। গোলাপের বাজারে সবসময় রমরমা ভাব।

রোজ নতুন শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে আর রোজ নতুন প্রেমিক-প্রেমিকা সৃষ্টি হচ্ছে। কেউ বা দিনে ২১ টি গোলাপের অধিকার রাখে। কেউ একটাতেই খুশি। একবিন্দু শিশিরেই বন্যা সৃষ্টি হওয়া পিঁপড়ার ঘরে বৃষ্টি আসে মহাপ্রলয় নিয়ে।

মৃত্যু অবধারিত ভেবে নেয় কেউ কেউ। কেউ আবার সংগ্রাম করে। ওই বন্যায় ভেসে আসা ঘাসের পাতাকে নৌকা ভেবে উঠে পড়ে ক্ষুদ্র ঘাসের উপর। বৃষ্টির আঘাতে পড়ে যায়। আবার ওঠে। অথচ এই মহাপৃথিবীর মানুষেরা ক্ষুদ্র আঘাতে স্বপ্নহীন হয়ে পড়ে।

আশার অভাবে মরে। স্বেচ্ছায় মরে। মরে গিয়ে বেঁচে যাওয়ার চেষ্টা করে। মৃত্যু যেন দুধভাত। বোহেমিয়ানেরা জন্ম-মৃত্যুর ধার ধারে না।

যতক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস চলে এবং সক্ষমতা থাকা অবধি তাদের অনবরত বিচরণ এই ক্ষুদ্র ভুবনে। ঠোঁটে প্রেমিকার ঠোঁটের বদলে সিগারেট চেপে রাখে। তাদের কাছে প্রেমিকার ঠোঁটের চেয়ে বেশী তৃপ্তি টং দোকানের চা-সিগারেটে।

নাগরিক জার্নাল
—০৬ আগস্ট‚ ২০২০

নাগরিক জার্নালঃ পর্ব ০৩

হৃদয়ের ঠিক মাঝখানটায় বিশাল কংক্রিটের সুসজ্জিত বাড়িতে যার বসবাস তাঁকে কিছুকাল চোখে না দেখলেও ভালো থাকা যায়।

কিন্তু সে কিছুকাল ভালো না বাসলে কিছু মুহূর্ত হয়ে ওঠে বিশাল বিষণ্নবর্ষ। রক্তিম গোলাপ অনন্য সুন্দর হলেও রক্তাক্ত গোলাপ কারও কাছেই সুন্দর নয়।

কিছু মানুষ হৃদয়ে বিশাল সিংহাসন পেতে কিছুদিনেই হৃদয় পুড়িয়ে ছাঁই করে দেয়। আবার কেউ পোড়া হৃদয়ের অনুর্বর ভূ-খণ্ডে নতুন চারা গজায়। এক অপরূপ সুন্দর শীতল হৃদয় উপহার দেয় আমাদের।

মানুষ পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষ চিনতেই ভুল করে। কিছু আনতি সুখ নিমজ্জিত সত্তার অন্তরাল থেকে মাঝেমাঝে মুখ তুলে বলে “বেঁচে আছি।” তাঁরা চায় একটি আনকোরা ভালোবাসার জন্ম। আরেকবার ডানা মেলতে।

সুখ এবং দুঃখ একে অপরের পরিপূরক। দুঃখ ব্যতীত সুখকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। যে দুঃখে জরাজীর্ণ সে-ই জানে জীবনে সুখের কতটা প্রয়োজন। আবার জন্ম থেকেই সুখী মানুষেরা কিঞ্চিৎ দুঃখ না পেলে বুঝতে পারে না যে সুখ-দুঃখের পার্থক্য কতটা।

ইউনিভার্সিটি জীবনের তারুণ্যের উদ্দীপনায় ভরপুর রাতভর কন্সার্টে বিষম ক্রন্দন আর চিৎকারে ‘ও আমায় ভালোবাসেনি…..’ গাওয়া ছেলেটি কিন্তু ওই পোড়া হৃদয় নিয়ে বেড়ে ওঠেনি।

তাঁর বাবা-মা তাঁকে যথেষ্ট স্বাধীনতায় মুড়িয়ে রাখলেও একটু বয়স হতেই অন্যের অতিরিক্ত স্বাধীনতার ফলস্বরূপ পরাধীনতার শিকলে নিজেই জড়িয়ে পড়েছে অজান্তে। এটি একটি দীর্ঘ এবং স্বল্পমেয়াদী আয়োজন।

কিছু রক্তিম গোলাপে মিশে থাকা ভালোবাসা একটা সময় জলন্ত সিগারেটের মতো তাঁর হৃদয়টাকেও পুড়িয়ে দিয়েছে। আনন্দ-বিষাদ আর পুরো পৃথিবীটা যাদের ম্যাগাজিনের পাতায় আর টিভির স্ক্রিনে বদ্ধ তাঁদেরও প্রকৃতি ডাকে।

তাঁরাও জানালা দিয়ে দূর-দূরান্তে দৃষ্টি ছুঁড়ে দিয়ে আক্ষেপ গিলে ফেলে। কেউ বৃদ্ধাশ্রমে আবার কেউ নিজের বাড়ি-বৃদ্ধাশ্রমে দিন কাঁটাচ্ছে। দেয়ালের ওপাশের পরবর্তী প্রজন্মের মুখ থেকে বিচ্ছুরিত বাক্য ভেদ্য দেয়াল পেরিয়ে তাঁদের কানের ভেতর ঢুকে পড়ে। এসব কথার অনুভূতি মস্তিষ্কে পৌঁছায় না। পৌঁছালেও প্রকাশ করে না। কখনো কখনো প্রকাশ করার মানুষই পায় না তাঁরা। সংকীর্ণ বাতায়নে বেঁধে রাখা তাঁদের নস্টালজিয়াগুলো সুদূর অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। সময়-পরিস্থিতি ভিন্ন হলেও অনুভূতি এক।

নাগরিক জার্নাল
—১০ আগস্ট‚২০২০

আরও পড়ুন

wzaman

Recent Posts

Safety measures for Heatwaves – Dr. Md. Abdur Rakib

Bangladesh is experiencing a heatwave and extreme weather. Today's highest temperature reached 42.6°C in Jashore…

1 week ago

Workaholism বা কর্মে আসক্তি  – আল শাহারিয়া

Workaholism হলো মানুষের এমন এক স্বভাব যার উপকারী এবং অপকারী উভয় দিকই বিদ্যমান। এর উপর…

3 weeks ago

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহারে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট

ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহার করলেই পাবেন ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। ফলে আপনার শেখার…

3 months ago

মেডুসা: গ্রিক মিথোলজির এক কালো অধ্যায় – আল শাহারিয়া

গ্রিক মিথোলজি অনুসারে, মেডুসা একসময় একজন অত্যন্ত সুন্দর নারী ছিলেন যিনি এমন এক সর্পকেশী দানবীতে…

1 year ago

রূপম ইসলামের জন্মদিনে লিখলেন আল শাহারিয়া

রূপম ইসলাম (Rupam Islam) নামটা শুনলেই রক্তের উথাল-পাথাল টের পাওয়া যায়। কথা‚ সুর আর গায়কীর…

1 year ago

সর্বকালের সেরা সুপারভিলেন: হিথ লেজার – আল শাহারিয়া

একজন সুপারভিলেন যিনি সুপারহিরোদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা,সম্মান পায় তিনিই হিথ লেজার।অনেকেই "The Dark Knight-2008" চলচিত্রটি…

1 year ago

This website uses cookies.