একটি রাত আল শাহারিয়া এর লেখা একটি মুক্তগদ্য। পড়তে পারেন। আশা করি, ভাল লাগবে।
রঙ হারানো বিকেল‚ ঈষৎ সন্ধ্যে ভাব। এই বুঝি গাঢ় অন্ধকার ঢেকে দেবে পুরো গ্রাম। ইলেক্ট্রিসিটির কৃত্রিম আলো নেই এখানে। চাঁদের আলোয় যতদূর দেখা যায় পুরোটাই শুদ্ধ-সুন্দর।
দখিনা হাওয়ায় তোমার দীঘল চুল উড়ে চলেছে অবিরত। পোড়ামাটির গন্ধ আসছে কুমারপাড়া থেকে। আমাদের এমন পোড়ামাটিতে গড়া রঙিন সংসার হোক‚ এই ইচ্ছে তোমাকে তাঁড়া করছে তা আমি তোমার ধীর পদচিহ্নে বুঝতে পারছি। কিন্তু‚ আমার চোখে সংসার যেমনই হোক‚ কলহ না থাকলে তা সুন্দর।
পায়ে পায়ে তালগাছ পেরিয়ে একটি সরু রাস্তা। রাস্তার মাঝ বরাবর দাঁড়াতেই চাঁদের আলোয় তালগাছের প্রতিবিম্ব এসে আমাদের দু’জনের মধ্যে সীমানা তুলে দিলো। আমরা ওই অন্ধকার ভেঁদ করে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে সাহস পেলাম না। কী তীব্র গাঢ় এই অন্ধকার! পাশেই জলহীন নরম কাঁদায় পূর্ণ পুকুর। কাঁদার গন্ধ ভেসে আসছে নাকে। “তুমি গন্ধ পাচ্ছো তো?” এই প্রশ্ন হয়তো অন্ধকার ভেঁদ করে তোমার কর্ণকুহরে পৌঁছালো না। নিরুত্তরের পুরনো বিষাদী যন্ত্রণার মতো আজকের যন্ত্রণা তীব্র নয় এত। কীসের যেন মিষ্টি শীতলতা আমার হৃদয় ক্রমাগত প্রশান্তিতে ভরিয়ে দিচ্ছে। তুমিসহ এই তুমিহীন রাত্রি আমার সুন্দর হলেও কিছুক্ষণ গত হয়ে আমাদের মধ্যকার ছায়া-দেয়াল সরে গেলে বুঝলাম তুমি বিষাদ-তাড়িত। তোমার প্রসাধনীহীন ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বিষাদের সবটুকু প্রেম তুলে নিলাম নিজের মধ্যে।
এখন মধ্যরাত। তুমি বিষাদী মেঘ। ঢেকে দিলে আমার চাঁদকে। কোথাও আলো নেই। আমার হৃদয় ছায়াপথে অনেক শব্দ পথ হারানো পথিকের মতো হাতড়ে মরছে নীড়। তুমি প্রাণবন্ত অনন্তযৌবনা প্রেয়সী আমার‚ জোৎস্না মাখছো শরীরে। হৃদয়ের কাছাকাছি এসে আমরা আমাদের সব দুঃখ মেঘ মিলিয়ে দিতে চেয়েছিলাম শূন্যতায় — সেসব আর হলো কই! আমরা পৃথিবী থেকে মুক্তিবেগে এখনও কোনো দুঃখকে শূন্যতায় ছুড়ে দিতে শিখতে পারিনি। পারলে এই রাত হতো জোৎস্নার চেয়ে অনবদ্য। ওই যে দূরে পাশাপাশি দু’টো কবর কী সুন্দর জোৎস্না মাখছে‚ ওরা জোৎস্না উপভোগ করতে পারে কি-না জানতে হলেও আমাকে একদিন মরতে হবে! আমরা মরে গেলে পাশাপাশি দু’টো কবরে সমাহিত হতে চাই এই ইচ্ছে আমার আজন্ম।
লোনাপানি ছুঁয়ে আসা মুক্ত বাতাস আমাদের চোখে ঘুম এঁকে দিচ্ছে। এই চন্দ্রিমা রাতে জোৎস্না তোমাকে অবগাহন করছে অনন্ত তন্ময়তায়। কিছু কথা জোৎস্নায় ডুবে মরে গেল‚ কিছু আঁধারে হারালো। বুকপকেটে মিথ্যে মিথ বর্ণহীন অর্থময়তায় ভরা। কোনো এক দুর্বোধ্য অর্থ আছে এসবের যা আমি আজও বুঝিনি।
একহাতে নীল বেদনা অন্য হাতে নীলিমায় হারানোর তীব্র সাধ নিয়ে আমি হাত বাড়ালাম। তুমি কোনটা বেছে নিয়েছো তা ভুলে গিয়েছি। বেদনা-ই ধরেছিলে কি কোমল হাতে? সবুজ গাছ রঙ হারিয়েছে সেই কবে। কোটি-পাতা-সারির ছোট্ট শূন্যতা দিয়ে জোৎস্না এসে আমাদের ভূমি বিদীর্ণ করে দিচ্ছে ক্রমাগত। কী অনিন্দ্য সেই দৃশ্য! সময়-সুযোগ করে আমাদের এই ভ্রমণ অনেক দশক পর। আমাদের নাগরিক ব্যস্ততা ভুলে তোমার চুলে বিনিময় ব্যবস্থায় দুষ্প্রাপ্য ফুলদের গুঁজে দেওয়া হয়নি বহুকাল। সেই ফুল নিষ্প্রাণ হলেও তোমার-আমার প্রাণকে সজীব করে।
মধ্যরাত পেরিয়ে এলো। আমি তোমার কণ্ঠে সবচেয়ে প্রিয় কবিতা শুনিছি….
[ধরো বছর কুড়ি পরে একদিন ‚
সন্ধ্যে নামার আগেই জোড়া গোলাপ হাতে নীড়ে ফিরলাম
কি ভেবে যেন আমাদের আপেক্ষিক দূরত্ব অতীতের কোনো অরণ্যে লুকালো।
প্রথম জীবনের প্রণয় অভিসারে ফিরে গেলাম
হাতে হাত রেখে সেই মহামারী সময়ের মতো।
ধরো বছর কুড়ি পর একদিন‚
তোমাকে অপ্রস্তুত আলিঙ্গন করলাম
শাহবাগের সুন্দরতম গোলাপটি এলো তোমার ঠিকানায়
কাঁটাহীন তবু আঘাত পেলে আজকেরই মতো।
মহাবিশ্বের অন্যসবকিছুর মতো আমাদের বয়স হয়ে এলো
বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়িনি কেবল আমাদের প্রেম।
ছোটো-ছোটো ছোঁয়ায় এখনও আমরা সুখী হই নির্জন রাস্তায় একাকী ভ্রমণের মতো।
ধরো বছর কুড়ি পর একদিন‚
এক জোৎস্না রাতে আমরা হারালাম গ্রাম্য রাস্তায়
দ্বৈত-ব্যক্তিগত ও গোপননীয় সে গ্রাম‚ জোনাকিরাও।
জোনাকির দল আমাদের পিছু নিয়ে আমাদের গল্প শুনছে‚
জীবনের গল্প‚ প্রেমের গল্প‚ প্রণয়ের গল্প‚ বিশ্বাসের গল্প…]
আরও পড়ুন
Bangladesh is experiencing a heatwave and extreme weather. Today's highest temperature reached 42.6°C in Jashore…
Workaholism হলো মানুষের এমন এক স্বভাব যার উপকারী এবং অপকারী উভয় দিকই বিদ্যমান। এর উপর…
ওস্তাদে WZAMAN প্রোমো কোড ব্যবহার করলেই পাবেন ২০% থেকে ৩০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট। ফলে আপনার শেখার…
গ্রিক মিথোলজি অনুসারে, মেডুসা একসময় একজন অত্যন্ত সুন্দর নারী ছিলেন যিনি এমন এক সর্পকেশী দানবীতে…
রূপম ইসলাম (Rupam Islam) নামটা শুনলেই রক্তের উথাল-পাথাল টের পাওয়া যায়। কথা‚ সুর আর গায়কীর…
একজন সুপারভিলেন যিনি সুপারহিরোদের চেয়েও বেশি ভালোবাসা,সম্মান পায় তিনিই হিথ লেজার।অনেকেই "The Dark Knight-2008" চলচিত্রটি…
This website uses cookies.