জুমঃ করোনার বদৌলতে যার উত্থান

জুম, অনলাইনে গত বছর ও এ বছর অনলাইনে বা অফলাইনে অন্যতম সেরা আলোচিত বিষয়! আজ এই জুম ও এর প্রতিষ্ঠাতা এরিক ইউয়ানকে নিয়েই আজকের আয়োজন।

করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী এক মরণ ভাইরাসের নাম। ইতিমধ্যে বহু মানুষের প্রাণ গেছে এই ভাইরাসের জন্য। ২০১৯ সালে চীনের উহান শহর থেকে এই ভাইরাসের যাত্রা, যার ধকল থেকে বিশ্ব এখনও বের হতে পারে নি।

সারা বিশ্বে বহু মানুষ তার কর্মসংস্থান হারিয়েছে। মানবেতার জীবনযাপন করছে অনেকে। কিন্তু এর মধ্যে এক জনের সম্পদ বেড়ে বহু গুণ বেড়ে গেছে, নাম এরিক ইউয়ান। জুম এর প্রতিষ্ঠাতা।চলে এসেছেন বিশ্বের ধনীদের কাতারে। কীভাবে হল তার এই উত্থান। সেই আলোচনাই হবে আজ।

কে এই এরিক ইউয়ান?

এরিকের জন্ম চীনে, শানতুং প্রদেশে। তিনি ফলিত গণিতে অনার্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। তার পিতা মাতা ছিলেন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার।

এরিকের গার্লফ্রেন্ড অর্থাৎ বর্তমান স্ত্রী থাকতেন প্রায় ১০ কিলোমিটার ট্রেন জার্নির দূরের পথ। আর যদি এইটা চীনের ট্রেন হয়, বোঝায় যাচ্ছে কতদূর থাকতেন। ফলে তাদের সচারচার দেখা সাক্ষাৎ হত না। এরিক এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তাদের বছরে অনেক সময় মাত্র দুইবার দেখা হত।

গার্লফ্রেন্ডের সাথে কীভাবে রিয়েল লাইফের মত কানেক্ট থাকা যায়, এই ধারণা থেকেই জুমের ধারণা আসে ইরিকের মাথায়।

পাস করার পর এরিক জাপানে চলে যান এবং বছর চারেক সেখানে কাজ করেন। এর আমেরিকা যাওয়ার জন্য তিনি ভিসার আবেদন করেন এবং আটবার ব্যর্থ হন ভিসা পেতে। এরপর অবশেষে ১৯৯৭ সালে সুযোগ আসে আমেরিকা যাওয়ার।

এরিক আমেরিকায় একটা টেলিকনফারেন্সিং কোম্পানীতে কাজ করতেন। তিনি যখন আমেরিকা এসেছিলেন খুব কম ইংরেজি জানতেন। তিনি দিনের অধিকাংশ সময় কোড লিখে সময় কাটাতেন এবং অবসরে ফুটবল খেলতেন।

জুম প্রতিষ্ঠার আগে এরিক টেলিযোগাযোগ কোম্পানী সিসকো ও পরে ওয়েবএক্স এ কাজ করতেন। পরে অবশ্য সিসকো ওয়েবএক্সকে কিনে নেয়েছিল।

তিনি যখন সিসকো তে কাজ করতেন তখন এই ভিডিও যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপারে সিসকোর সাথে কথা বলেন, কিন্তু সিসকোর এটা পছন্দ হয় নি, তাদের মনোযোগ ছিল তখন স্যোসাল মিডিয়ার দিকে, ফেসবুক তখন তর তর করে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছিল।

ফলে এরিক সিসকো ত্যাগ করেন এবং জুম প্রতিষ্ঠা করেন।

জুম
Photo: Kena Betancur/Getty Images

জুম কী?

জুম হচ্ছে এমন একটি টেলিযোগাযোগ মাধ্যম যার সাহায্যে রিয়েল লাইফ ভিডিও কলিংয়ের মাধ্যমে আপনার ক্লায়েন্টের মিটিং করতে পারবেন।

কিন্তু এরিক হয়তো কল্পনাও করতে পারেনি, করোনা ভাইরাসের তার সময়কাল তার কোম্পানী বিপ্লব ঘটায়ে ফেলবে।

বর্তমানে যারা শিক্ষার্থী কিংবা চাকুরীজীবী আছি, তাদের একদিনও হয়তো জুম ছাড়া চলছে না। আমাদের সমস্ত অনলাইন মিটিং ও ক্লাস চলছে জুমের মাধ্যমে।

এই জুম এরিক ইউয়ানকে বিশ্বের সেরা ৪০০ ধনীর কাতারে নিয়ে এসেছে। যে এরিক আমেরিকা আসতে একসময় আট বার প্রত্যাক্ষিত হয়েছে, সেই এরিক এখন আমেরিকার অন্যতম সেরা ধনী।

করোনা কালে জুমের শেয়ার মূল্য বিদ্যুতের গতিতে বেড়ে গিয়েছিল, যা ছিল প্রায় ৪০০%।

এরিক প্রথমের ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ করতেন যারা জুমের সেবা বাদ দিয়ে দিত।

জুমের বর্তমানে ৩০০০০ এরও অধিক কর্পোরেট ক্লাইন্ট রয়েছে যাদের স্যামসাং, উবার, ওয়ালমার্টের খ্যাত নামা কোম্পানীও রয়েছে।

বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধানরা তাদের অফিশিয়াল কাজ কর্ম এখন জুমের মাধ্যমে করছেন, যেটা একটা যুগান্তকারী বিপ্লব জুমের জন্য।

এই মহামারীর আগে যখন এরিক বাইরে যেতেন তখন তিনি জুমের মাধ্যমে মিটিংয়ের কাজ করতেন, যাতে তার বাচ্চাদের সাথে আরও একটু বেশি সময় দিতে পারেন।

জুমের বিপ্লব আরও একটা কারণে হয়েছে, সেটা হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবসহ নানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করার সুযোগের কারণে। একারণে এখন কারো ইন্টারভিউ খুব সহজে জুমের সাহায্যে করা যাচ্ছে, সাথে সাথে সেটা প্রচারও করা যাচ্ছে স্যোসাল মিডিয়ায়।

যদি আমরা একটু স্মরণ করি, করোনার শুরুর দিকে তামিম ইকবালের বিভিন্ন দেশি বিদেশী খেলোয়াড়দের সাথে সাক্ষাৎকার বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মানুষ খুব আগ্রহের সাথে বসে থাকতো কখন এই লাইভ শুরু হবে।

আমরা আরও যদি দেখি, ফেস ফ্য পিপল নামে একটা শো শুরু হয়েছে স্যোসাল মিডিয়া ফেসবুকে ও ইউটিউবে, যেটা এখন জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। এটা হোস্ট করেন সাইফুর সাগর। বিভিন্ন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এখানে তর্ক বিতর্ক চলে।

এভাবে জুম নানা প্লাটফর্ম তৈরি করতে সহায়তা করেছে। এরিক ইউয়ান এর প্রেম যে এক সময় পৃথিবীতে বিপ্লব বয়ে আনবে, হয়তো এরিক কোন দিন এটা স্বপ্নেও কল্পনা করেনি।

আরও পড়ুন

Leave a Reply