অনলাইন ইনকাম: লেখাপড়ার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন

অনলাইন ইনকাম শব্দটা আমাদের দেশে পরিচিত। এর সাথে ফ্রিল্যান্সিং শব্দটাও জড়িত। মনে করেন, আপনি চাকরি পাচ্ছেন না বা টিউশন নেই, আপনাকে কেউ বলতেই পারে, তুমি কেন অললাইনে ইনকাম করছো না?

অনেকের ধারণা শুধু মোবাইল বা কম্পিউটার থাকলেই অনলাইন থেকে ইনকাম সম্ভব। কিন্তু আসলেই কি অনলাইন থেকে ইনকাম সম্ভব? এই নিয়ে তাহলে একটু ঘাটাঘাটি করা যাক।

আসলে আমরা অনলাইন ইনকাম মানে কি বুঝি? সাধারণ কথায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার যে ইনকামটা করবেন, সেটা কে বোঝায়।

আজ আমরা অনলাইন ইনকামের কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

অনলাইন ইনকাম এর কিছু উপায়

১. ওয়েবসাইট বা ব্লগ শুরু করা

বর্তমান পৃথিবীটা ইনফরমেশন বা তথ্যের উপর নির্ভরশীল। আমাদের যদি কোন জিনিসের জানার প্রয়োজন হয় আমরা তৎক্ষণাৎ গুগল করি, সেটা জানার জন্য। কিন্তু গুগল তো শুধু তথ্য খুজে দেয়, ইনফরমেশন গুলো নিশ্চয়ই অন্য কেউ দেয়। এই অন্য কেউই আপনি হতে পারেন। ওয়েবসাইট তৈরি আপনার ওয়েবসাইট মনিটাইজ(যেমনঃ গুগল এডসেন্স) করে আয় করতে পারেন। একটা ওয়েবসাইট করতে প্রধানত দুইটা জিনিস দরকার। ডোমেইন ও হোস্টিং। কিন্তু এই ডোমেইন বা হোস্টিং কি জিনিস?

ডোমেইন হল ঠিকানা। যেমন, আপনার বাড়ি বা দোকানের একটা ঠিকানা থাকে। তেমনি ভাবে আপনার তথ্য গুলো কোথায় আছে, তার ঠিকানা দরকার, নইলে তো গুগল খুজে পাবে না। এই ঠিকানাটাই হচ্ছে ডোমেইন।

যেমন ফেসবুকের ডোমেইনঃ facebook.com, গুগলের ডোমেইন google.com

আরেকটা জিনিস হল হোস্টিং। হোস্টিং মানে হচ্ছে জায়গা। আপনার তথ্যগুলো রাখতে একটা জায়গার প্রয়োজন, যেমনি ভাবে আপনার বাড়ির শুধু ঠিকানা থাকলে চলবে না, একটা নির্দিষ্ট জায়গাও তো দরকার। বিভিন্ন কোম্পানী অনলাইনে বছর বা মাসভেদে এই জায়গা ভাড়া দেয় বা হোস্টিং ভাড়া দেয় ওয়েবসাইটের জন্য। এসব নিয়ে গুগল করতে আরও বিস্তারিত অনেক কিছু পাবেন।

অনলাইন ইনকাম: লেখাপড়ার পাশাপাশি অর্থ উপার্জন

আরও পড়ুন

২. ডোমেইন ব্যবসা

উপরের অংশে আমরা ডোমেইন সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। বর্তমানে ডোমেইন বিজনেস খুবই প্রসার লাভ করেছে। আপনি যদি ইন্টারনেট রিসার্স করে ভাল মানের ডোমেইন কিনে রেখে দিতে পারেন, তাহলে পরবর্তী অনেক ভাল দামে বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু এর জন্য আপনাকে ধৈর্য্য ধরে বসে থাকতে হবে।

ডোমেইন বিজনেস সম্পর্কে কিছু উদাহরণ দিই। আমরা সকলে ফেসবুক ও শাওমি সম্পর্কে জানি। একটা স্যোসাল মিডিয়া, আরেকটা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। Facebook কে fb.com কিনতে $8.5 million খরচ করতে হয়েছিল এবং শাওমিকে mi.com কিনতে $3.6 million খরচ করতে হয়েছিল।

তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, ডোমেইন ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন কি পরিমাণ বড় হচ্ছে। অনলাইন ইনকাম এর দারুণ একটা সম্ভাবনা এটি।

৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং

এফিলিয়েট মার্কেটিং বর্তমান মার্কেটিং দুনিয়ায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এফিলিয়েট মার্কেটিং হচ্ছে, নিজের কোন মাধ্যম (যেমনঃ ইউটিউব,ওয়েবসাইট, ফেসবুক) ব্যবহার করে অন্যের পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে দেয়া এবং তার বিনিময় একটা কমিশন নেয়া। বিশ্বের অন্যতম সব ইকমার্স কোম্পানী অনেক পণ্যই এফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সাহায্যে তাদের পণ্য বিক্রয় করছে। এদের মধ্যে অন্যতম আমেরিকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ইকমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজন।

এর ফলে বহু তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হচ্ছে।

৪. ইউটিউব

ইউটিউব হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম। আপনি যখন কোন সমস্যায় পড়েন, তখন সেই সমস্যাটি ইউটিউবে গিয়ে সার্চ দেন এবং একটা সমাধান পান। কিন্তু এই ভিভিও গুলো কিন্তু ইউটিউব বা গুগল নিজে করে না। কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা এগুলো করে। এই ভিভিও গুলোর মাঝে গুগল এড দেখায় এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের এরজন্য অর্থ প্রদান করেন। এছাড়া যারা ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করেন, তারা বিভিন্ন পণ্য প্রমোট করে তাদের চ্যানেলে এবং সেই প্রডাক্টের কোম্পানীর কাছ থেকে অর্থ নেন।

আপনি যদি কোন বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি চ্যানেল ক্রিয়েট করতে পারেন।

৫. লেখালেখি

লেখালেখি হতে পারে আপনার অর্থ উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম। আপনি যদি কোন বিষয় খুব সুন্দর করে লিখতে পারেন, অনেক সংবাদপত্র আছে যারা আপনার লেখার জন্য বসে আছে। একটা লেখার বিনিময় তারা ভাল এমাউন্ট পে করে।

আর এখন তো লেখালেখির পরিসর বেড়েছে। আপনি ইচ্ছে করলে নিজে ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে লেখালেখি করতে পারেন। তারপর আপনার ওয়েবসাইটটিকে মনিটাইজ করে গুগল বা বিভিন্ন প্লাটফর্মের এড আপনার ওয়েবসাইটে বসিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।

৬. ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট

এই আধুনিক ডিজিটাল যুগে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানীকে নিজেদের অবস্থান অনলাইনে পরিচয় করে দিতে গেলে দরকার একটা খুব সুন্দর সাজানো গোছানো ওয়েবসাইট, যেটা দেখে সেবা গ্রহণকারীরা আকৃষ্ট হয়। আপনি যদি ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টে ভাল হয়ে থাকেন, একাজ টি করার মাধ্যমে আপনি সেই কোম্পানী বা প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ নিতে পারেন। বর্তমানে অনেক কোম্পানী (মার্কেটপ্লেস) আছে, যাদের কাজ হচ্ছে কাজ দেওয়া ও কাজ নেয়া লোকের মাঝে সংযোগ ঘটায়ে দেওয়া। যেমনঃ আপওয়ার্ক, ফাইবার, গুরু ইতায়দি।

৭. এসইও

এসইও এর পুরো অর্থ হচ্ছে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন। মনে করেন, আপনার একটা ওয়েবসাইটে কোন বিষয় নিয়ে লিখলেন, কিন্তু শুধু লিখলেও তো আর সেটা মানুষের কাছে পৌছাবে না, তার জন্য বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন বুঝাতে হবে যেন তারা আপনার লেখাটি প্রথমে দেয় যখন লোকজন ঐ বিষয় গুলো জানতে সার্চ করেন।

এসইও একটা বড় ইন্ডাস্ট্রি। এখানকার কৌশল সমায়ের সাথে সাথে অনেক পরিবর্তন হয়। এই এসইও সঠিক উপায়ে শিখতে পারলে অনেক অনলাইন ইনকাম সম্ভব।

বই পড়ুন অনলাইনে

৮. অনলাইন কোর্স বিক্রি

২০১৯ সালে শুরু হওয়া কোভিড-১৯ বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থায় এক ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। অনলাইনের কল্যানে শিক্ষাব্যাবস্থায় কিছু পরিবর্তন শুরু হয়েছিলো। কোভিড-১৯ সেই ব্যবস্থাকে যেন ঢেলে সাজানো।

একসময় যেটা কল্পনা তে ছিল, ঘরে বসে ক্লাস করা। সেটি এখন বাস্তবে রূপ নিছে। অনেকে তার টিসিং প্রফেশনটা পুরোপুরি অনলাইন করে ফেলেছে। আপনি কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে পারদর্শী হয়ে থাকেন, তাহলে সেই বিষয়টা নিয়ে ভিডিও করে আপনি সেটা বিক্রি করতে পারবেন।

এটার একটা বিশাল সুবিধা হচ্ছে, কোন লেকচার আপনাকে বারবার দিতে হচ্ছে না। আর আপনার কোর্স যত মানুষ বেশি কিনবে, আপনার আর কষ্ট থাকছে না।

৯.অনুবাদ

অনুবাদ হতে পারে আপনার অর্থ উপার্জনের দারুণ একটা মাধ্যম। আপনার ভাষার উপর দক্ষতা থাকে,তাহলে আপনি এ কাজ টি খুব সহজে করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি যে ভাষা থেকে অনুবাদ করছেন এবং যে ভাষায় অনুবাদ করছেন, এ দুটি ভাষাতেই আপনার দখল থাকা জরুরি।

তাই বলে আক্ষরিক অনুবাদ করলে আপনার অনুবাদ কেউ পড়বে না,আপনাকে করতে হবে ভাবানুবাদ। কারণ, আক্ষরিক অনুবাদের জন্য তো গুগল মামা আছে।

অনেক সংবাদপত্র এ অনুবাদের কাজ করিয়ে থাকে। আপনি অনুবাদে অত্যন্ত দক্ষ হলে আপনি চাইলে বিভিন্ন বিখ্যাত বই অনুবাদ করতে পারেন। আপনি চাইলে এই অনুবাদকে আপনি ক্যারিয়ার হিসেবেও নিতে পারেন।

এছাড়াও নানাবিধ উপায়ে অনলাইন ইনকাম এর। আপনি চাইলে এসবের মধ্য থেকে পরিশ্রমের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে অনলাইন ইনকাম করতে।

Leave a Reply