রোজ যা শিখছি (পর্ব ১,২ ও ৩) – আল শাহারিয়া

‘রোজ যা শিখছি’ একটি শিক্ষামূলক ধারাবাহিক। যা লেখেন আল শাহারিয়া। এতে রোজ নতুন নতুন জানা-অজানা বিষয়কে গুছিয়ে লেখা হয়।

পর্ব-১: আল কুরআন

ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ধর্মগ্রন্থ আল কুরআন। চারটি আসমানী কিতাবের মধ্যে এটিই সর্বশেষ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে সভ্যতায় আবির্ভাব হয়েছে এই কিতাবের। ধর্মমতে এটি আল্লাহর বাণী দিয়ে সজ্জিত। পুরো পৃথিবীর পুরাঘটিত, ঘটমান এবং ভবিষ্যত সবকিছুর আদ্যোপান্ত এই গ্রন্থে রয়েছে। অসামান্য ছন্দ এবং বাগধারার প্রয়োগ পাওয়া যায় এই গ্রন্থে যা অন্য সকল গ্রন্থের চেয়ে মহিমান্বিত। দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে কুরআন অবতীর্ণ হয়। কুরআনের প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে এবং শেষ আয়াত অবতীর্ণ হয় ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে। কুরআন আজকের এই রূপ পেয়েছে বহু পরিশ্রমের পর। প্রথম দিকে অবতীর্ণ আয়াতসমূহ মুখস্থ করে রাখতেন হাফেজগণ। কিন্তু‚ যুদ্ধে হাফেজগণ মৃত্যুবরণ করলে কুরআনের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তখন হযরত ওমর (রাঃ) এর অনুরোধ ও পরামর্শে আবু বকর (আঃ) এর নির্দেশে যায়েদ ইবিনে সাবিত কুরআনের আয়াতসমূহ লিখে রাখার কাজ হাতে নেন। এতে ১১৪ টি সূরা রয়েছে। এতে বিদ্যমান আয়াত সংখ্যা ৬,২৩৬ টি; মতান্তরে ৬,৬৬৬ টি। এই গ্রন্থ আরবি ভাষায় সজ্জিত।

পর্ব-২: ম্যাডম্যান থিওরি (The madman theory)

ম্যাডম্যান থিওরি হল একটি রাজনৈতিক থিওরি যার সাথে সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের পররাষ্ট্র নীতির মিল পাওয়া যায়। এই থিওরি অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধানগণ পুরোটা সময় ধরে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিদ্যমান রাখে। হটকারি কাজ এবং সিদ্ধান্ত দ্বারা অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোকে চাপে রাখে। তাদের এসব কাজ এবং সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জনগণ তাদেরকে পাগল আখ্যা দিয়ে থাকে। কারণ‚ প্রত্যেকটা সাধারণ মানুষের বিশ্বাস একজন রাষ্ট্রনায়ক অসীম বুদ্ধিমান‚ ধৈর্যশীল এবং সুক্ষ্ম চিন্তার অধিকারী হয়ে থাকেন। কোনো হটকারি সিদ্ধান্ত নেওয়া সুষম রাষ্ট্রপ্রধানের বৈশিষ্ট্য নয়। কিন্তু‚ এই নীতিতে ঘটে উল্টোটা। এবং‚ অন্য রাষ্ট্রগুলোকে আতঙ্কে রেখে এই নীতিতে পরিচালিত রাষ্ট্র সহজেই অনেক সুবিধা ভোগ করে। কিন্তু‚ এই থিওরি অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হলে দেশীয় সম্পদ এবং বৈশ্বিক শক্তপোক্ত অবস্থান থাকা আবশ্যক। এসব কারণেই এই থিওরিকে ম্যাডম্যান থিওরি বলা হয়। কথিত আছে‚ রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন এবং আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প এই নীতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করে থাকেন।

আল শাহারিয়া ; ছবি: মোঃ জাকারিয়া

পর্ব-৩: বাটারফ্লাই ইফেক্ট (Butterfly effect)

কেমন হবে যদি আপনার একটি মামুলি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে বিশাল সুনামির সৃষ্টি হয়? একটিমাত্র ভ্যাক্সিনের স্বল্পতা কোটি মানুষের মৃত্যু এমনকি একটি গোটা সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হতে পারে। বাটারফ্লাই ইফেক্ট মূলত এই সম্পর্কটিরই প্রতিফলন। গণিতবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ বাটারফ্লাই ইফেক্ট বা প্রজাপতি প্রভাবের পরিচিতি ছড়িয়েছেন। বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা রয়েছে যে শাখা অন্য সকল শাখার মতো সরলরৈখিক বা সূত্র মেনে চলে না। এই শাখা অরৈখিক এবং অনিশ্চিত। এইসব বিষয় নিয়ে যে শাখায় আলাপ করা হয় তা হলো বিশৃঙ্খলার বিজ্ঞান। একে Chaos বলা হয়। মূলত এই শাখা থেকেই বাটারফ্লাই ইফেক্টের ধারণা এসেছে। প্রজাপতির ডানার মতো একধরণের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেল অনুযায়ী বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামের জন্ম। বাংলাদেশের একজন সাধারণ মানুষের ট্রেন মিস হওয়ার ফলে গোটা পৃথিবীর ধ্বংস হয়ে যেতেই পারে৷ কারণ‚ পৃথিবীর কোনো মানুষ একা নয়৷ এই বিস্তৃত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলশ্রুতিতে একটি মানুষ গোটা পৃথিবীর রূপ বদলে দেওয়ার জন্য দায়ী হতেই পারে।

আল শাহারিয়া
কবি, গীতিকার ও কন্টেন্ট রাইটার

Leave a Reply