প্রেয়সীর নিমিত্তে

প্রেয়সীর নিমিত্তে আল শাহারিয়ার লেখা একটি কবিতা। আশা করি কবিতাটি উপভোগ করবেন।

বেপরোয়া উত্তাপে এই মহাজাগতিক শোকগাথায়
মুক্তির সুর মেলানোর বাসনা অতীতের অভিসন্ধি‚
হঠাৎ গেয়ে ওঠা এই নিশিত গানের অনন্ত বেদনায়
তুমি মৃন্ময়ী মূর্তির ন্যায় আজও — শূন্য উপলব্ধি।
আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত থেকে অশূন্য মহাকাশ
আমাদের নবজাত প্রেমের মৃত্যু চিৎকারে মুখরিত‚
আমার প্রেম জাতিস্মর‚ মুছে ফেলার নেই অবকাশ
ধীর পায়ে মাড়িয়েছো যত প্রণয় শৈশব অঙ্কুরিত।
রঙ-হারানো সন্ধ্যার জোৎস্না বাসরে মুখর আসরে
অবিস্মৃত পংক্তিরা সব মেলে দেয় প্রাচীন মুক্ত ডানা‚
সেই ডানাতেই ভর করে শুধু খুঁজে ফেরে অবসরে
বিস্মৃতা প্রণয় রমনীর যতটুকু আছে চেনা-জানা।
রৌদ্রস্নাত দুপুরের দক্ষিণ খোলা জানালায় আমরা
দু’জন দ্বৈত-ব্যক্তিগত ব্যথাকাতরতা নিয়ে আছি‚
হঠাৎ‚ একরাশ ঠিকানাবিহীন বাতাসে উত্তাল কামরা
এ বাতাসে খেলা করে সুখ‚ এ বাতাসে বাঁচি আমরা।
তাঁরবিহীন যোগাযোগে একে অপরের জন্য কান পাতি
শ্যামল দেহের নীচে শীত খেলা করে তখনই ভীষণ‚
যানজট পেরিয়ে তুলি মুঠোফোন – ফেলে সাঁঝবাতি
অনন্ত সাধে বহুদিন বাদে সেই তীব্র শীতের অন্বেষণ।
সুদূর অন্তরিক্ষে নীল মেঘের খামে তোমার নামে চিঠি
সূর্যের আদিম উত্তাপে পুড়ে ছাই; অক্ষরমালা হয় শেষ‚
পারষ্পরিক বোঝাপড়ার সাক্ষী নক্ষত্ররা জানে ঠিকই
আমাদের সব ব্যক্তিগত ভিন্ন গন্তব্যের একই অবশেষ।
শুভ্র কাশের নীড়ে নীল রাত অবলীলায় যায়-আসে
সৌন্দর্যের বিতৃষ্ণায় ভবঘুরে এককাপ গরম চা-য়ে
বুকপকেটে তোমায় দেখার স্বপ্ন নিয়ে বাঁচি দীর্ঘশ্বাসে
এই অন্তহীন দীর্ঘশ্বাসে বেঁচে থাকা দুঃখ-সুখের দায়ে।
আমার ভালো থাকায় তোমার রেখে যাওয়া স্পর্শদানা
আরও সুখের প্লাবন এনে দেয় রুক্ষ জীবনে আমার‚
তোমার স্পর্শের আদেশে আমার খারাপ থাকা মানা
নির্ঝর স্বভাবের শুদ্ধতায় মোড়ানো স্পর্শ তোমার।

নাগরিক রূপকথায় ঢেকে দেওয়া চেনা বিদীর্ণ শহর
শিশুহারা মায়ের ছাপা নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির আড়ালে
চাপা পড়ে যায় তোমার নিমিত্তে আমার দুঃখ বহর।
এই দুঃখ পারষ্পরিক গোলযোগ‚ দুঃখ আর সুখের।
অস্পষ্ট আলোয় তোমাকে দেখেছি‚ তোমাকে এঁকেছি
মিহিদানা সন্ধ্যায় তুমি কেনো অকারণ দূরত্ব বাড়ালে
তোমাকে খুব কাছ থেকে ছুঁয়ে দেখবো বলে ডেকেছি।
অজস্র পড়ন্ত বিকেল সন্ধ্যের মাঝে নিরবে ডুবেছে।
ক্যাফেটেরিয়া জীবনের লালরঙা কৃষ্ণচূড়ার চাদরে
আমি বাঁচি তোমার প্রেমে‚ বাঁচি তোমার অনন্ত আদরে‚
ধূসর বিষন্ন গোলাপে; মৃত পাপড়ির নির্যাস রক্ত-লাল
আমি পেরিয়ে যেতে চাই দুঃসহ অস্তির স্মৃতি-জাল।
অর্থহীন যৌবনে জেনে গিয়েছি অলীক এ চরাচর
এই পথচলায় তুমি স্ত্রী বাচক হও শব্দে চির-সহচর।

দুঃখ-মুক্তির রঙিন চিঠি নিয়ে কোনো টাট্টুঘোড়া
দ্রুত পায়ে আসুক আমাদের ব্যক্তিগত ঠিকানায়‚
তোমাকে মনে করে বৃষ্টিতে ভেজে এই চোখ-জোড়া
ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়‚ ঘটনায় অথবা দুর্ঘটনায়।

— প্রেয়সীর নিমিত্তে
— আল শাহারিয়া

প্রেয়সীর নিমিত্তে

কবিতাটি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল।

আরও পড়ুন

Leave a Reply