ওয়েবসাইট কী এবং কীভাবে এটি তৈরি করা যায়?

ওয়েবসাইট আমাদের অনলাইন দুনিয়ার অন্যতম হাতিয়ার। আমরা ওয়েবসাইট ছাড়া অনলাইন জিনিসটা ভাবতেই পারি না।কিন্তু এই ওয়েবসাইট কী? খায় না মাথায় দেয়? যে কেউ কি এটা তৈরি করতে পারে বা এর মালিক হতে পারে, পারলেও কিভাবে? তারই উত্তর খোজার চেষ্টা থাকবে আজকের এই আর্টিকেলে।

ওয়েবসাইট কী

ওয়েবসাইট কথাটা শুনলেই হয়তো বা আমাদের গুগল বা ফেসবুকের নাম মাথায় চলে আসবে। কারণ আমাদের নিত্য প্রয়োজনে আমরা এই দুই ওয়েবসাইট কে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি।

ওয়েবসাইট হল এমন একটা মাধ্যম যেখানে আমরা আমাদের তথ্য রাখতে পারি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারনেটের সহায়তায় সেগুলো ব্যবহার করতে পারি। এই যে বললাম আমরা তথ্য, এই তথ্য থাকার জন্য তো একটা জায়গা দরকার। আর এই জায়গাটাকে বলি আমরা হোস্টিং।

এখন শুধু তথ্য রাখলেই তো হবে না, তথ্যটা কোন জায়গায় আছে, তারও তো একটা ঠিকানা দরকার। আর এই ঠিকানার নাম হল ডোমেইন।

এই হল সহজ কথায় ওয়েবসাইট এবং হোস্টিং ও ডোমেইন।

তাইলে আমরা বুঝলাম, একটা ওয়েবসাইট করতে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে দুইটা জিনিস অবশ্যই লাগবে, তা হল ডোমেইন এবং হোস্টিং। এখন আমাদের জানার বিষয় হল এগুলো কোথায় পাওয়া যায়।

ডোমেইন ও হোস্টিং কোথায় পাওয়া যায়?

এই ডোমেইন ও হোস্টিং বেচার জন্য দুনিয়ায় হয়তো লক্ষাধিক কোম্পানী আছে, যেগুলোর মধ্যে অনেকে অনেকে আছে ঠকবাজ। কিন্তু মজার বা দুঃখের বিষয় টা হচ্ছে এই ডোমেইন বা হোস্টিং আপনি একেবারে কিনে নিতে পারবেন না। আপনাকে বছর বা মাস অনুযায়ী কিনতে হবে। তবে আপনি একেবারে একাধিক মাস বা বছরের প্যাকেজ একসাথে কিনতে পারবেন।

ডোমেইন কেনার জন্য বিখ্যাত কোম্পানীগুলোর মধ্যে নেইমচিপ, এপিক, গোড্যাড্ডি, গুগল ডোমেইন অন্যতম। অবশ্য এখন আমাদের অনেক দেশি কোম্পানীই এই ব্যবসা শুরু করেছে। এদের মধ্যে ডায়ানাহোস্ট, এক্সোনহোস্ট, কোড ফর হোস্ট অন্যতম।

আর হোস্টিং কেনার জন্য সাইটগ্রাউন্ড, ব্লু হোস্ট, হোস্টিংগার, নেইমচিপ, গুগল ক্লাউড, গোড্যাড্ডি অন্যতম। আর দেশীয় কোম্পানীর ভিতর বিডিআইএক্স সার্ভার, এক্সোনহোস্ট, ডায়ানাহোস্ট, হোস্টএভার অন্যতম।

অর্থাৎ, কোম্পানী গুলো ডোমেইন ও হোস্টিং ব্যবসা সাধারণত একই সাথে করে থাকে।

এখন ধরে নিলাম আপনি ডোমেইন ও হোস্টিং কিনে বসে আছেন, কিন্তু তাই বলে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে যায় নি, আপনি শুধু বাড়ির ঠিকানা ও জায়গা ভাড়া নিছেন। এখন ইট, বালু, সিমেন্ট দিয়ে সুন্দর একটা বাসযোগ্য বাড়ি করার পালা অর্থাৎ, সুন্দর একটা ওয়েবসসাইট বানানো।

ওয়েবসাইট কীভাবে তৈরি করা যেতে পারে

একটা ওয়েবসাইট আপনি বিভিন্ন ভাবে তৈরি করতে পারে। আপনি যদি কোডিং এ এক্সপার্ট হন, তাহলে কোডের মাধ্যমে আপনি আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

বর্তমানে ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য বিভিন্ন কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা সিএমএস এর সহায়তা নেয়া হয়। এর মধ্যে জয়প্রিয়তার শীর্ষে আছে ওয়ার্ডপ্রেস এবং ব্লগস্পট। আজ আমরা এই দুই সিএমএস নিয়ে আলোচনা করবো।

ওয়েবসাইট কী এবং কিভাবে এটি তৈরি করা যায়?

ওয়ার্ডপ্রেস

পৃথিবীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ওয়েবসাইট এই ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে বানানো। এটা একটা ওপেন সোর্স প্লাটফর্ম। আপনি ওয়ার্ডপ্রেসের সহায়তায় আপনার কাঙ্ক্ষিত ব্লগ, ই-কমার্স, ব্যবসায়িক বা ইচ্ছে মত ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন।

ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে প্রচুর ফ্রি এবং প্রিমিয়াম থিম, যেটা আপনাকে ওয়েবসাইট তৈরিতে সাহায্য করবে। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেসে রয়েছে প্রচুর ফ্রি এবং প্রিমিয়াম প্লাগিন, যেটা আপনাকে আপনার ওয়েবসাইটের কোন এক নির্দিষ্ট ফাংশন পরিচালনা করতে সহায়তা করে।

আপনি যদি ইন্টারনেটে একটু ঘাটাঘাটি করেন, আপনি প্রচুর রিসোর্স পাবেন এগুলো জানার জন্যে। এখানে কিছু আমি ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলের লিংক দিবো যেটা আপনার ওয়ার্ডপ্রেস জানতে এবং ওয়েবসাইট কীভাবে তৈরি করবেন সে কাজে সাহায্য করবে।

ব্লগার বা ব্লগস্পট

ব্লগার হচ্ছে গুগলের ফ্রি ওয়েবসাইট বানানোর একটি সিএমএস। এটা দিয়ে ওয়েবসাইট বানালে আপনার কোন হোস্টিং কেনা লাগবে না। গুগল আপনাকে ফ্রি হোস্টিং দিবে। আপনি চাইলে ডোমেইন নাও কিনতে পারেন, এক্ষেত্রে গুগল আপনাকে একটা সাবডোমেইন দিবে।

আপনি চাইলে আপনার ক্রয়কৃত ডোমেইনটি এই ব্লগারে যোগ করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে বছরে বছরে শুধু ডোমেইনটাই রিনিউ করতে হবে।

এখন আপনার কাছে মনে হতে পারে, ফ্রিতেই যদি পাই কেনার কি দরকার। কিন্তু আমরা তো জানি ফ্রি তে সব কিছু ভাল হয়। ব্লগারেরও সেরকম কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, যে কারণে অনেকে ব্লগার দিয়ে ওয়েবসাইট শুরু করলেও পরে ওয়ার্ডপ্রেস বা এই রকম কোন পেইড প্লাটফর্মে চলে যায়।

সোহাগ৩৬০ এর ব্লগস্পটের টিউটরিয়াল

ওয়েবসাইট থেকে উপার্জন

ওয়েবসাইট কী তো জানলাম, কিন্তু এখান থেকে টাকা উপার্জন কীভাবে সম্ভব? এ কথাটার সাথে অনেক কিছু সম্পর্কিত। যেমন, আপনার ব্যবসা আছে, আপনি আপনার ব্যবসাটাকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে মানুষের নজরে আনলেন। আপনার গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে গেল। এখানে ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি ইনকাম না হলেও আপনার ব্যবসার গতিকে ত্বরাণ্বিত করেছে।

এছাড়া আপনার ওয়েবসাইটে এড বসিয়ে আপনি আপনার ওয়েবসাইট থেকে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। অনেক এড কোম্পানী আছে, যেমনঃ এডসেন্স এর মাধ্যমে ওয়েবসাইটে এড বসিয়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া আপনি কোন কোম্পানীর প্রচার আপনার ওয়েবসাইট দিয়ে করিয়ে তাদের অর্থ নিতে পারেন। এথেকে উভয় পক্ষ লাভবান হবে।

বর্তমান অনলাইন দুনিয়া দাঁড়িয়ে আছে এই ওয়েবসাইটের উপর, আপনার ওয়েবসাইট তাহলে কবে শুরু করছেন?

আশা করি, ওয়েবসাইট কী ও কীভাবে তৈরি করবেন সে বিষয়ে অল্প হলেও ধারণা দিতে পেরেছি।

Leave a Reply